স্ট্রোক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন, যা করবেন না

স্ট্রোক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন, যা করবেন না

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, উচ্চ রক্তচাপ এবং মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে দিন দিন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে অধিকাংশ মানুষই এই দুটি জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে গুলিয়ে ফেলেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোক হয় ব্রেইনে যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয় এবং কিছু ব্রেইন টিস্যু রক্তের অভাবে মারা যায়। অন্যদিকে, হার্ট অ্যাটাক হয় হার্টে (হৃদপিণ্ডে)।

কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপিস্ট ডা. সাইফুল ইসলাম স্ট্রোকের লক্ষণ ও দ্রুত করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন, যা জীবন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, স্ট্রোকের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলি বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুলাংশে কমে আসে। স্ট্রোক শনাক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত সহজ কৌশলটি হলো ‘FAST’ শব্দটিকে মনে রাখা:

F = Face (মুখ): স্ট্রোকের সঙ্গে সঙ্গে মুখ বেঁকে যায় বা ঝুলে যায়।

A = Arm (হাত): শরীরের যেকোনো এক পাশের হাত-পা প্যারালাইসিস হয়ে যায়। রোগী তুলতে বা নাড়াতে পারে না।

S = Speech (কথা): কথা বলতে সমস্যা হয়, কথা জড়িয়ে যায় বা রোগী একেবারেই কথা বলতে পারে না।

T = Time to call 999: উপরের লক্ষণগুলি দেখা গেলে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ৯৯৯ নম্বরে কল করুন।

স্ট্রোক শনাক্ত করে অ্যাম্বুলেন্সে কল দেওয়ার পর তা পৌঁছানো পর্যন্ত মূল্যবান সময়টুকুতে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে:

রোগী জ্ঞান থাকলে: রোগীকে এক পাশ করে শুইয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন, প্যারালাইসিস হওয়া অংশ যেন ওপরে থাকে এবং সুস্থ অংশটি বিছানার সঙ্গে নিচে থাকে।

মাথা ও হাতকে সাপোর্ট দিন: মাথা সামান্য উঁচু রাখতে একটি বা দুটি বালিশ ব্যবহার করুন। অবশ্যই মাথা এবং প্যারালাইসিস হওয়া হাতকে সাপোর্ট দিয়ে রাখুন, যাতে হাত ঝুলে না থাকে।

সাবধানতা: কোনোভাবেই প্যারালাইসিস হাতকে ধরে টানাটানি করবেন না। এতে সোল্ডার সাবলাক্সেশন (Shoulder Subluxation) হতে পারে, যা পরবর্তীতে রোগীর হাতের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা কঠিন করে তোলে।

খাবার বা পানীয় নয়: স্ট্রোক করা রোগীকে জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও কোনো কিছু খেতে দেবেন না বা পান করতে দেবেন না।

পোশাক আলগা করুন: রোগীর শরীরে কোনো টাইট কাপড় থাকলে তা খুলে দিন, যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কোনো অসুবিধা না হয়।

রোগী অজ্ঞান থাকলে প্রথমে তার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং পালস (নাড়ী) পরীক্ষা করুন:

শ্বাস-প্রশ্বাস ও পালস স্বাভাবিক থাকলে: অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করুন এবং রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখুন।

শ্বাস-প্রশ্বাস ও পালস না পাওয়া গেলে: যদি আপনার সিপিআর (CPR- Cardiopulmonary Resuscitation) সম্পর্কে জ্ঞান থাকে, তবে অবিলম্বে তা শুরু করুন। অন্যথায়, দ্রুত আপনার নিকটবর্তী স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সহযোগিতা নিন।

দ্রুত শনাক্তকরণ এবং প্রাথমিক সঠিক পদক্ষেপই স্ট্রোকের কারণে সৃষ্ট স্থায়ী ক্ষতি ও মৃত্যু এড়াতে সবচেয়ে সহায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *